প্রচারণা মাধ্যম হিসেবে কার র্যাপের যাত্রা শুরু হয় সার্ভিস যানবাহন ও ১৮ চাকার ট্রাকে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে কার র্যাপকে যে কোনো ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করেছে কিছু কোম্পানি।
গত কয়েক বছর ধরে যারা OOH ইন্ডাস্ট্রির একটি শাখা গড়ে তুলেছে, যেখানে রাইড শেয়ার ড্রাইভারদের গাড়িতে ভিনাইল র্যাপের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এই বিজ্ঞাপন মাধ্যমের সূচনা করেছে স্টিকার ড্রাইভার।
বিজ্ঞাপন দেওয়ার একটি নতুন মাধ্যম হিসেবে অনেক মার্কেটারই এখনও কার র্যাপ সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। এই মাধ্যমের বিশেষ কিছু সুবিধা নিয়ে তাই এখানে আলোচনা করব, যাতে বিজ্ঞাপনদাতারা এর সদ্ব্যবহার করতে পারেন।
গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনে র্যাপিং-এর মাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞাপন ট্রানসিট বিজ্ঞাপনের মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় মাধ্যম বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৯ সালে নেইলসেন এবং OAAA এর সম্মিলিতভাবে করা একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ৬৪% মানুষ তার গত এক মাসের দেখা সব বিজ্ঞাপনের মধ্যে যানবাহনে র্যাপ করা বিজ্ঞাপন বেশি মনে রেখেছে। নিচের ছবিতে এই পরিসংখ্যানে পাওয়া ফলাফলগুলোর একটি তুলনা দেখা যায়।
বিজ্ঞাপনের পরিসরের পাশাপাশি তা মানুষজনের কাছে কতটা স্মরণীয় সেটাও খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ গ্রাহকরা কেনাকাটা করার সময় আপনার বিজ্ঞাপনটির কথা মনে না রাখলে শুধু বেশি সংখ্যক মানুষ বিজ্ঞাপন দেখা থেকে কোনো বাস্তব ফলাফল পাওয়া যাবে না।
২০১৫ সালে ঢাকা ক্লাবের কাছে বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে ২ জন রিকশাচালকের মৃত্যুর পর ঢাকায় বিলবোর্ড বসানোর সংখ্যা ও স্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু হয়। নগরের সৌন্দর্য বর্ধন ও নিরাপত্তার খাতিরে তাই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে।
অন্যদিকে, গাড়ির ওপর দেওয়া বিজ্ঞাপনের সুবিধা হচ্ছে এর ওপর এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। একটি বিজ্ঞাপনযুক্ত গাড়ি এমন সব জায়গায় আপনার ব্র্যান্ডকে পৌঁছে দিতে পারে যেখানে বিলবোর্ড বা অন্য কোনো OOH মাধ্যম পৌঁছাতে পারবে না। এ কারণে শাহবাগ বা বনানীর মতো চাহিদাপূর্ণ রাস্তা ও মোড়ে, যেখানে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ সীমিত এবং ব্যয়বহুল, সেখানে কার র্যাপের ব্যবহারই সম্ভাব্য সমাধান।
গাড়িতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কোম্পানিগুলো, যেমন স্টিকার ড্রাইভার, ক্যাম্পেইনের জন্য এলাকার উপর নির্ভর করেও গাড়ি নিযুক্ত করে থাকে যাতে ব্র্যান্ড তাদের নির্ধারিত স্থানভিত্তিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
আজকাল আমাদের জীবনের প্রতিটা অংশেই জায়গা করে নিয়েছে প্রযুক্তি। তারই একটা ধারা হচ্ছে ‘ট্র্যাকিং’। হাতের ঘড়ি বা মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে স্মার্ট হোম পর্যন্ত - প্রতিটা ডিভাইসই আমাদের কোনো না কোনো আচরণ ট্র্যাক করছে।
আমাদের বেশিরভাগ অংশই এই আধুনিক ডিভাইসগুলির সুবিধা ভোগ করতে নিজেদের গোপনীয়তা বিসর্জন দেওয়াটা মেনে নিয়েছি। একই সাথে, তথ্যের এই বিপুলতা বিজ্ঞাপনদাতাদেরকে আরও শক্তিশালী বিজ্ঞাপন তৈরি করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
এই সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং সুবিধার অন্যতম ব্যতিক্রম ছিল ট্রানসিট বিজ্ঞাপন। কিন্তু কার র্যাপ চালু হওয়ার সাথে সাথে ট্রানসিট বিজ্ঞাপনও এখন পরিমাপযোগ্য হয়ে গেছে। কারণ অন-ভেহিকল অ্যাডভার্টাইজিং ড্রাইভারের মোবাইলের জিপিএস ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক ট্র্যাক করা সম্ভব।
এছাড়া গাড়ির মাইলেজ এবং লোকেশন তথ্যের উপর নির্ভর করে ইম্প্রেশনও পরিমাপ করা হয় নিয়মিত, যা যে কোনো সময় বিজ্ঞাপনদাতা তাঁর কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইস থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
OOH বিজ্ঞাপন সাধারণত অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় অনেকটা ব্যয়বহুল। বিশেষ করে বিলবোর্ডের সংখ্যা কমা এবং চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বিলবোর্ড স্থাপনার ভাড়া বৃদ্ধি পায়। ঢাকা শহরে জায়গার ওপর নির্ভর করে ৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি বিলবোর্ডের ভাড়া মাসে ৬০,০০০ টাকারও বেশি হতে পারে।
গাড়িতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে চাহিদা। গাড়ির সংখ্যা বিলবোর্ডের মতো সীমিত না হওয়ায় খুব সহজেই চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি পাওয়া যায়। এবং ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে গাড়ির সংখ্যা আরও বেশি থাকে। তাই যেসব কারণে বিলবোর্ডের ভাড়া বাড়ে, সেসব কারণে গাড়িতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার খরচ বাড়ে না। প্রায় একই সংখ্যক ইম্প্রেশনের বিনিময়ে গাড়িতে বিজ্ঞাপনের জন্য মাসে মাত্র ১০-১৫ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।
গাড়িতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে বিজ্ঞাপনটা এক জায়গায় বসে থাকে না। ঢাকা ছাড়াও দেশের সব এলাকায় যথেষ্ট গাড়ি থাকায় এই বিজ্ঞাপন মাধ্যম ব্যবহার করে ব্র্যান্ডের ক্যাম্পেইন দেশে কোনায় কোনায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। যাতে করে সময় ও পরিশ্রমের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য উপযুক্ত মাধ্যম এবং তা ব্যবহারের পরিসর নির্ধারণ করা সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য মাধ্যমগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা। কার র্যাপ ছাড়াও আরও অনেক OOH বিজ্ঞাপন মাধ্যম রয়েছে যা আপনার ব্র্যান্ডের জন্য উপযোগী হতে পারে। কিন্তু কার র্যাপ দিন দিন আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হয়ে উঠছে এবং এর সঠিক ব্যবহার আপনার ব্র্যান্ডকে এনে দিতে পারে অসাধারণ সাফল্য।